শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

আরশের ছায়া

আরশের ছায়া পাবে কারা?

                


     রশ হল রাজার সিংহাসন। শরীয়তে আরশ বলা হয় সেই মহাসনকে, যার উপর মহান আল্লাহ সমারূঢ় আছেন। এই আরশ হল মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় সৃষ্টি। মহানবী বলেন, “কুরসীর তুলনায় সাত আসমান হল ময়দানে পড়ে থাকা একটি বালার মত। আর আরশের তুলনায় কুরসী হল ঐরূপ বালার মত!” (সিলসিলাহ সহীহাহ ১০৯ নং)


ইবনে আব্বাস বলেন, 'কুরসী হল মহান আল্লাহর পা রাখার জায়গা।' (মুখতাসারুল উলু ১/৭৫)


মহান আল্লাহ সেই কুরসীর বিশালতা সম্বন্ধে বলেন, وسع كرسيه السماوات والأرض ولا يؤوده حفظهما وهو العلى العظيم} অর্থাৎ, তাঁর কুরসী আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। আর সেগুলির


রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি সুউচ্চ, মহামহিম। (সূরা বাক্বারাহ ২৫৫ আয়াত)


এই মহা আরশের পায়া ও প্রান্ত আছে। মহানবী বলেন, “নবীদের মধ্যে এককে অপরের উপর প্রাধান্য দিয়ো না। যেহেতু কিয়ামতের দিন মানুষ মূর্ছিত হয়ে পড়বে। অতঃপর আমি সর্বপ্রথম কবর থেকে উঠে দেখব মূসা আরশের পায়াসমূহের একটি পায়া (অন্য এক বর্ণনা মতে আরশের এক প্রান্ত) ধরে আছেন। অতএব জানি না যে, তিনি মূর্ছিত হয়েছিলেন অথবা (আল্লাহকে দেখতে চাওয়ার সময়) মূর্ছিত হওয়ার বিনিময়ে তিনি মূর্ছিত হননি।” (বুখারী, মুসলিম) মহান আল্লাহ বলেন,


{وترى الملائكة حافين من حول العرش يسبحون بحمد ربهـم وقـضي بينهم بالحق وقيل الحمد لله رب العالمين} (٧٥) سورة الزمر

 অর্থাৎ, তুমি ফিরিশ্তাদেরকে দেখতে পাবে যে, ওরা আরশের চারিপাশঘিরে ওদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। ন্যায়ের সঙ্গে সকলের বিচার করা হবে; আর বলা হবে, ‘সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য।' (সূরা যুমার ৭৫ আয়াত)


الذين يحملون العرش ومن حوله يسبحون بحمد ربهم ويؤمنـون بـه ويستغفرون للذين آمنوا ربنا وسعت كل شيء رحمة وعلما فاغفر للـدين تابوا والبغوا سبيلك وفهم عذاب الجحيم} (۷) سورة غافر


অর্থাৎ, যারা আরশ ধারণ ক'রে আছে এবং যারা এর চারিপাশ ঘিরে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা প্রশংসার সাথে ঘোষণা করে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ক’রে বলে, 'হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী; অতএব যারা তওবা করে ও তোমার পথ অবলম্বন করে, তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। (সুরা মু'মিন ৭ আয়াত)


আরশ বহনকারী নির্দিষ্ট ফিরিশতা আছেন। (সূরা মু'মিন ৭, হা-াহ ১৭ আয়াত)


কিয়ামতে আরশের ছায়া হবে।


কিয়ামতের ভয়ানক সেই দিন। যেদিন সূর্য অতি নিকটে হবে। আর তার কারণে মানুষ অত্যন্ত ঘর্মসিক্ত হবে। স্বেদস্রাবে আমল অনুযায়ী কারো পায়ের গ্রন্থি অবধি, কারো হাঁটু অবধি, কারো কটি অবধি, কারো বা নাসিকা (ও কর্ণ) পর্যন্ত ডুবন্ত হবে। মাটির নিচে সেই ঘাম পৌঁছবে ৭০


রাসূলুল্লাহ বলেছেন, কিয়ামতের দিন লোকেরা বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে দন্ডায়মান হবে (এবং তাদের এত বেশি ঘাম হবে যে,) তাদের মধ্যে কেউ তার ঘামে তার অর্ধেক কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)


তিনি বলেন, “কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এত কাছে করে দেওয়া হবে যে, তার মধ্যে এবং সৃষ্টজীবের মধ্যে মাত্র এক মাইলের বাবধান থাকবে।” মিকুদাদ থেকে বর্ণনাকারী সুলাইম বিন আমের বলেন, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা যে, নবী মীল' শব্দের কি অর্থ নিয়েছেন, যমীনের দূরত্ব (মাইল), নাকি (সুরমাদানীর) শলাকা যার দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয়? “সুতরাং মানুষ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবতে থাকবে। তাদের মধ্যে কারো তার পায়ের গাঁট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত (ঘাম হবে) এবং তাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও হবে যাদেরকে থাম লাগাম লাগিয়ে দেবে।” (অর্থাৎ, নাক পর্যন্ত ঘামে ডুববে।) এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ তাঁর মুখের দিকে ইশারা করলেন। (মুসলিম) তিনি আরো বলেন, কিয়ামতের দিন মানুষের প্রচণ্ড ঘাম হবে। এমনকি


তাদের থাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত নিচে যাবে। আর তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে নিমজ্জিত থাকবে। এমন কি কান পর্যন্তও। (বুখারী ও মুসলিম) বলা বাহুল্য, কিয়ামতের সেই কঠিন রৌদ্রতপ্ত দিনে ছায়ার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এত বিশাল আরশ হওয়া সত্ত্বেও সবার ভাগ্যে তার ছায়া


জুটবে না। যদিও আরশ সকল সৃষ্টির ঊর্ধ্বে, তবুও মহান আল্লাহর খাস সৃষ্টি হবে সে ছায়া। যেমন সেদিন সাদকার ছায়া হবে এবং প্রত্যেক সাদকাকারী সেই ছায়ায় অবস্থান করবে।


আল্লাহর রসূল বলেন, “কিয়ামতের মাঠে রৌদ্রতপ্ত দিনে) সমস্ত লোকেদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক মানুষ নিজ সাদকার ছায়াতলে অবস্থান করবে।” (আহমাদ, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিলান, সহীহ তারগীৰ৮৭২ নং)


আল্লাহর রসূল বলেন, “সদকাহ অবশ্যই কবরবাসীর কবরের উত্তাপ ঠান্ডা করে দেবে এবং মুমিন কিয়ামতে তার ছায়াতে অবস্থান করবে।” (তাবারানীর কাবীর, বাইহাকী, সহীহ তারগীব ৮৭৩নং) কিন্তু কারা হবে সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যারা কিয়ামতে আরশের ছায়া পেয়ে সেই নিকটবর্তী সূর্যের উত্তাপ থেকে মুক্তিলাভ করবে? আল্লাহর রসুল বলেছেন,

(سبعة يظلهم الله تعالى في ظله يوم لا ظل إلا ظله إمام عدل وشاب نشأ في عبادة الله ورجل قلبه معلق في المساجد ورجلان تحابا في الله اجتمعا عليه وتفرقا عليه ورجل دعته امرأة ذات منصب وجمال فقال إلى أخـاف الـه ورجل تصدق بصدقة فأخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه ورجل ذكر الله خاليا ففاضت عيناه). متفق عليه


অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই (কিয়ামতের) দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না, (তারা হল) :


১। ন্যায় প্রায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা)।


২। সেই যুবক, যার যৌবন আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়। ৩। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।)


৪৷ সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে, যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়।


৫। সেই বাক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, “আমি আল্লাহকে ভয় করি।”


৬। সেই ব্যক্তি যে দান ক'রে গোপন করে, এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না।


৭। সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে


পানি বয়ে যায়। (বুখারী ৬৬০নং, মুসলিম ১০৩ ১০


অবশ্য উক্ত সাত প্রকার বাক্তি ছাড়া আরও এক প্রকার মুসলিম আরশের ছায়া পাবে, যারা মানুষকে ঋণ দেয় এবং ঋণ পরিশোধে অক্ষম বাক্তিকে সময় দেয়, অথবা তার ঋণ মকুব ক'রে দেয়। আল্লাহর রসূল ধ্রু বলেন, “যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকেসময় দেলে, অথবা তার ঋণ মঞ্জুর করে দেবে, কে সেই দিন তাঁর আরশের ছায়া পান করবেন, যে দিন তার সেই ছায়া কোন ছায়া থাকবে না।" (সমী, সহ ৬১০৯ প্রিয় পাঠক! আপনি যদি সেই কঠিন রোগ থেকে বাঁচতে চান, তাহলে


সেই চরিত্র তৈরি করুন, যার ফলে আরশের ছায়া লাভ করবেন। আসুন! আরো বিস্তারিতভাবে সেই চরিত্র ও কর্মাবলীর কথা আলোচনা

সালাত

c

#include int main() { int i,n,l,u,p,sum; printf("enter lower & upper limit"); scanf("%d%d",&l,&u)...